সর্বশেষ সংবাদ রামজানে পণ্যের দাম বেশি নিলে ব্যবস্থা-  ইউএনও শিবগঞ্জ  ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত জেলা হলো  চাঁপাইনবাবগঞ্জ। রহনপুরে পূবালী ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন সোনামসজিদে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের স্থান জটিলতা নিরসন চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছাত্রদলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা প্রশাসকের প্রেসব্রিফিং এমপিওভূক্ত বে-সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থান কর্মসূচী চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডিএনসি’র অভিযান \ ৪০ কেজি গাঁজাসহ আটক-২ আর্ন্তজাতিক বর্ণবৈষম্য দিবস উপলক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মানববন্ধন গোমস্তাপুরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে বাসায় হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ
Large Add

সুনীল অর্থনীতির সুফল ঘরে তুলতে ১০ কৌশল:পাঁচ চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত

দেশের সম্ভাবনাময় সুনীল অর্থনীতির (ব্লু-ইকোনমি) সুফল ঘরে তুলতে ১০ ধরনের কৌশল নেয়া হচ্ছে। কৌশলগুলো নির্ধারণ করেছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। একইসঙ্গে পাঁচ ধরনের চ্যালেঞ্জও চিহ্নিত করা হয়েছে।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- সমুদ্রে বাংলাদেশের বিশাল সুযোগ রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তারে সহায়ক। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা ঘিরে বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রাপ্ত এলাকা এখন দেশের ‘উন্নয়নের নতুন ক্ষেত্র’ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় (২০২১-৪১) এসব কৌশল ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়। দীর্ঘমেয়াদি এ পরিকল্পনা সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে ছয় বছর পেরিয়ে গেছে; কিন্তু এখনও কিছুই হয়নি। সমুদ্র অর্থনীতিতে বিনিয়োগের দ্বার দ্রুত খুলে দেয়া উচিত। তা না-হলে সমুদ্রের গভীরে তো আর কেউ সীমানা মানবে না। ফলে সম্পদ চলে যেতে পারে অন্য দেশে। শুধু পরিকল্পনার মধ্যে থাকলে চলবে না, এখন প্রয়োজন কৌশলগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন।

সূত্র জানায়, প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে যথাক্রমে ২০১২ এবং ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি হয়। বাংলাদেশ তার এলাকাভুক্ত অংশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং মহীসোপান সমন্বয়ে বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার ওপর স্বত্বাধিকার লাভ করে। অগভীর মহীসোপান ও সমুদ্রের অংশ যথাক্রমে ২০ এবং ৩৫ শতাংশ। বাকি ৪৫ শতাংশ গভীর সমুদ্র।

পরিকল্পনায় চিহ্নিত চ্যালেঞ্জগুলো হল : বিনিয়োগের অভাব এবং বেসরকারি খাতের অপর্যাপ্ত ভূমিকা। এ ছাড়া সামুদ্রিক সম্পদের পরিমাণ নির্ধারণ ও জ্ঞানের অভাব, সামুদ্রিক ও উপকূলীয় উন্নয়ন কাঠামোর অনুপস্থিতি এবং এ সংক্রান্ত মানবসম্পদের অভাব।

পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত জিইডির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম যুগান্তরকে বলেন, সাগর, মহাসাগর ও উপকূলে সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহার করে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরিচালিত কার‌্যাবলির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে সুনীল অর্থনীতি। পাশাপাশি টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থানসহ সার্বিক কল্যাণ সমুদ্রের সুরক্ষণে সহায়ক।

এতে অন্তর্ভুক্ত কার‌্যাবলির মধ্যে রয়েছে- সামুদ্রিক সম্পদের অনুসন্ধান ও উন্নয়ন, সমুদ্র ও উপকূলীয় স্থানের যথোপযুক্ত ব্যবহার, সামুদ্রিক কর্মতৎপরতার বিপরীতে পণ্য ও সেবা সহায়তা দান এবং সামুদ্রিক পরিবেশ সুরক্ষা করা। সুনীল অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য প্রয়োজন হবে এই সব কার‌্যাবলির নীতি, নিয়ন্ত্রণ, বিধি, ব্যবস্থাপনা, প্রশাসন কাঠামো বা কাঠামোসমূহের মৌলিক ও সার্বিক পরিবর্তন সাধন করা। একইসঙ্গে বিভিন্ন সামুদ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চিহ্নিত করা।

পরিকল্পনাটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কৌশল হিসেবে বলা হয়েছে- সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একটি সবল নীতি কাঠামো গঠন করা প্রয়োজন। এই কাজ সম্পাদনের জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। ‘সামুদ্রিক ও উপকূলীয় উন্নয়নের জন্য নীতিকাঠামো’ শিরোনামে এ খসড়া নীতিকাঠামো অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদে পেশ করা হবে।

এ ছাড়া সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে বিনিয়োগের বেশিরভাগই আসতে হবে বেসরকারি খাত থেকে। সুনীল অর্থনীতিতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য যথোপযুক্ত প্রণোদনা ও নিয়ন্ত্রণমূলক নীতিমালা গ্রহণ করা হবে। নতুন জ্ঞান, প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ আনার জন্য এফডিআইয়ের (সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ) ভূমিকা বিস্তৃত করা হবে।

সমুদ্রে মাছ ধরায় বংশপরম্পরাগত নৌকার বিশাল বহরগুলোর জন্য একটি পরিবীক্ষণ, নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে। ব্যয়সাশ্রয়ী ও ঝামেলামুক্ত নিবন্ধন ও অনুমতিপত্র সংগ্রহের প্রক্রিয়া সহজ করা হবে।

পরিকল্পনায় আরও বলা হয়- সামুদ্রিক সম্পদের পরিমাণগত ধারণা ও জ্ঞানের ঘাটতি পূরণে একটি দ্বিমুখী কৌশল গ্রহণ করা হবে। দেশজ ক্ষেত্রে নেভি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারিগরি সহায়তা নিয়ে সমুদ্রের জরিপকাজ পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এ ধরনের কাজে দক্ষতাসম্পন্ন সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে কারিগরি সহায়তা নেয়া হবে। এ ছাড়া আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা থেকে জ্ঞান ও সম্পদ সমাবেশ ঘটানো হবে।

সুনীল অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট গবেষণা ও যৌথ বিনিয়োগ অবারিত করতে ভারত, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চলমান উদ্যোগগুলো বেগবান করা হবে। সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

এর মধ্যে অন্যতম হল- চলতি বছরের মধ্যে চকোরিয়া-সুন্দরবনের ক্ষতিগ্রস্ত সামুদ্রিক ও উপকূলীয় ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু করা; ২০২৫ সালের মধ্যে সামুদ্রিক সব ধরনের বর্জ্য অপসারণের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অর্জন ও অবকাঠামো স্থাপন করা হবে; দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য প্রধান জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনাক্রমে নাবিক, মৎস্য প্রযুক্তিবিদ, জৈব প্রযুক্তিবিদ ও সামুদ্রিক সম্পদ জরিপকারীদের প্রাধান্য দিয়ে অধিকতর অগ্রগতির প্রচেষ্টা নেয়া।

এ ছাড়া বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে সামুদ্রিক উদ্ভিদের (সি-উইড) সম্ভাবনা আহরণের ওপর। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সামুদ্রিক উদ্ভিদ বিস্তারে অধিকতর উদ্যোগ নেয়া হবে।

অন্য কৌশলগুলো হল- দীর্ঘমেয়াদে মাছের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে প্রেক্ষিত পরিকল্পনার অধীন জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া। এ ব্যাপারে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সেগুলো হল- প্রজনন মৌসুমে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকরণ, সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড ঘিরে ঘোষিত এলাকার অনুরূপ সামুদ্রিক সংরক্ষিত অঞ্চল স্থাপন ইত্যাদি। বেশকিছু কর্মব্যবস্থা গ্রহণ করে উপকূলীয় পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটানো হবে। এ ছাড়া দূরবর্তী সমুদ্র অঞ্চল খনন ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে জ্বালানির একটি উৎস হিসেবে সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনাকে যুক্ত করার পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সম্প্রতি এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সুনীল অর্থনীতিকে কাজে লাগাতে আমরা সরকারিভাবে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত রয়েছি। যেমন, বর্তমানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু আমরা বলেছি ৫০ কোটি নয়, প্রয়োজনে ৫০০ কোটি টাকার বড় প্রকল্প নিয়ে আসেন। এই খাতে অর্থ ব্যয়ে কোনো দ্বিধা নেই সরকারের।

Add img sm
Add img sm

আরও পড়ুন

%d bloggers like this: