সর্বশেষ সংবাদ ওসির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগকারী সেই নারীর বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর মানববন্ধন রামজানে পণ্যের দাম বেশি নিলে ব্যবস্থা-  ইউএনও শিবগঞ্জ  ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত জেলা হলো  চাঁপাইনবাবগঞ্জ। রহনপুরে পূবালী ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন সোনামসজিদে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের স্থান জটিলতা নিরসন চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছাত্রদলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা প্রশাসকের প্রেসব্রিফিং এমপিওভূক্ত বে-সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থান কর্মসূচী চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডিএনসি’র অভিযান \ ৪০ কেজি গাঁজাসহ আটক-২ আর্ন্তজাতিক বর্ণবৈষম্য দিবস উপলক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মানববন্ধন
Large Add

রাজশাহী নৌ পুলিশ: নদীতেই কাজ অথচ নেই নৌকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: নদীতেই যাদের কাজ সেই নৌ পুলিশ রাজশাহীতে কাজ করছে নৌকা বা স্পীড বোট ছাড়াই। এক বছরেরও বেশি সময় আগে রাজশাহীতে নৌ পুলিশের কার্যক্রম শুরু হলেও এখন পর্যন্ত এখানে তাদেরকে নৌকাও দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় নৌ পুলিশ মুলত পদ্মার ধারেই তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। আর যখন নদীতে কোন অভিযান চালাচ্ছে তখন নিতে হচ্ছে ভাড়া নৌকা। এই সীমাবদ্ধতার কারণে পদ্মায় তদারকি তেমন একটা করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের। এদিকে, পদ্মায় অনিরাপদভাবে নৌকা চলাচল করলেও সেসব নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না। এর ফলে মাঝে মধ্যেই ঘটছে নৌ দুর্ঘটনা । ঘটছে প্রাণহানী। জানাগেছে, ২০১৯ সালের জুন মাসে ১০ জন লোকবল নিয়ে যাত্রা শুরু করে রাজশাহী নৌ পুলিশ। প্রায় ৪৫ কিলোমিটার নদীর নিরাপত্তার জন্য রাজশাহী নৌ-পুলিশের বর্তমানে রাজশাহীতে ৯ জন পুলিশ সদস্য আছেন। এছাড়াও আছেন একজন পুলিশ সুপার। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, তারা ভুগছেন নানা বিধ সংকট। এমনকি তাদের নিজস্ব স্পীড বোট বা নিজস্ব নৌকা নেই। রাজশাহী নৌ-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহদী মাসুদ জানান, সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমরা এসব নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব নৌকা না থাকায় কিছুটা সংকটতো হচ্ছেই। সীমান্তবর্তী এ নদীতে চোরাচালান প্রতিরোধে যে কার্যক্রম সেগুলো চালাতে হলে নৌকা ভাড়া করতে হয়। এছাড়া পদ্মা নদীর ধারে নিয়মিত টহল কার্যক্রম রয়েছে। আর এখানে নৌযানও আমরা খুব তাড়াতাড়ি পাবো বলে আশা করছি। এজন্য প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে, বছরের বেশিরভাগ সময়ই রাজশাহীতে পদ্মা নদী থাকে নিরব প্রায়। পানির তেমন গতি থাকেনা। থাকেনা স্রোতে। কিন্তু বর্ষা মৌসুম আসলে বাড়ে সেই গতি। আর এসময় ভ্রমন পিপাসুদের মধ্যে নৌকা ভ্রমনের মাত্রাও বেড়ে যায়। কিন্তু প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা না থাকায় আর নৌকার মাঝিদের বেপরোয়া চলাচলের কারণে বেড়ে যায় দুর্ঘটনা। একারণে প্রায়ই পদ্মায় ঘটছে নৌকা ডুবির ঘটনা। ঘটছে প্রানহানী। যেকোন দুর্ঘটনার পর নৌকা চালানোর উপরে বিভিন্ন বিধি নিষেধ দেয় স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু কদিন যেতে না যেতেই সব কিছুতে চলে আসে ঢিলেঢালা ভাব। এভাবেই বারবার ঘটছে প্রানহানীর ঘটনা। রাজশাহীতে বিনোদনের বিশেষ জায়গা হিসেবে ধরা হয় পদ্মা নদীর পাড়কে। পদ্মার ধারে ঘুরতে গিয়ে বাড়তি আনন্দ পেতে অনেকই নেমে যান নৌকা ভ্রমনে। মানুষকে বিনোদন দিতে বেশ কিছু নৌকা থাকে সব সময় প্রস্তুত। কিন্তু এই বিনোদনই কাল হচ্ছে অনেকের। আবার প্রয়োজনের তাগিদে অনেকেই নদী পার হতে গিয়েও পড়ছেন দুর্ঘটনার কবলে। সব শেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর নৌকা ডুবে নিখোঁজ হন ঢাকার বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ও এক স্কুল ছাত্র। পরে তাদের দুজনের মরদেহ উদ্ধার হয়। এর আগে গত বছরের ১৪ জুলাই নগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় ঘুরতে গিয়ে নৌকা থেকে দুই যাত্রী নদীতে পড়ে যায়। পরে তাদের উদ্ধার করে নৌকার লোকজনই। একই দিন নদীতে ভ্রমনের জন্য নৌকায় উঠে প্রমত্তা পদ্মার ঢেউ-এ তলিয়ে যায় দুই নারী। তবে, কিছুক্ষণ পরই দু’জন ভেসে উঠেন। তাদের সাথে পানিতে পড়েছিলো একটি কাঠের ব্রেঞ্চ। এই বেঞ্চ আঁকড়ে ধরে ভেসে থাকেন পানিতে পড়ে যাওয়া ঐ দুই নারী। এর পর স্থানীয়দের চেষ্টায় উদ্ধার হয় এই দুই তরুনী। এবছরের মার্চ মাসে রাজশাহী মহানগরীর শ্রীরামপুরের পদ্মানদীতে যাত্রীবাহী নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। নৌকাটি বিয়ে বাড়ি থেকে ফিরছিল। নৌকা থেকে অনেকেই সাঁতরে পাড়ে উঠলেও নববধূ সুইটি খাতুনসহ ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের সবাই একই পরিবারের সদস্য ছিলো। এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির প্রধান ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম। তদন্ত প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ রাখা হয়। এর মধ্যে মাছ ধরা নৌকা ও বিনোদনের নৌকা আলাদা করা, মাঝিদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। যাত্রী সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া। লাইফ জ্যাকেট বাধ্যতামুলক করা, সন্ধ্যর পর কোনো নৌকা চলাচল না করাসহ বেশকিছু সুপারিশ আনা হলেও পরে এসব সুপারিশের বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। নৌকায় বাড়তি যাত্রী উঠানো, লাইফ জ্যাকেট না পরা ছিলো নিত্যদিনের ঘটনা। গত ২৫ সেপ্টেম্বর যে নৌকাটি দুর্ঘটনার শিকার হয় তার যাত্রীদের কাছেও ছিলোনা লাইফ জ্যাকেট। অথচ এসব নৌকায় সবার জন্য জ্যাকেট থাকার কথা। এদিকে, স্থানীয়রা জানায়, মাঝে মধ্যেই ছোটখাটো নৌ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। মাঝে মধ্যেই নৌকা থেকে মানুষ নদীতে পড়ে যায় কিন্তু তার পরও কোন ধরনের নিরাপত্তা না নিয়েই এই সব নৌকা চালকরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নদীর বুক চিরে। যারা নৌকা চালায় তাদের অনেকেই অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক। রাজশাহী নৌ-পুলিশের পুলিশ সুপার দীন মোহাম্মদ বলেন, আমি রাজশাহী অঞ্চলের পুলিশ সুপার হিসেবে সম্প্রতি যোগদান করেছি। এর আগে যে দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলো আমার সময়ে নয়। তবে আমি শুনেছি আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে সবশেষ যে ঘটনাটি ঘটেছে তার পর আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি ও কঠোরভাবে নিয়ম মানার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামীতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে সেজন্য নৌ পুলিশ সচেতন থাকবে। সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সংকট আছে। আমরা বাংলাদেশ পুলিশের একটি নতুন ব্রাঞ্চ। এখানে সংকট কিছুটা থাকবেই। আমাদের সংকট আমরা কাটিয়ে উঠছি। আমাদের নৌযানও চলে আসলে ঠিক ভাবে মনিটরিং করতে পারবো। তবে তিনি দাবি করেন সংকটেও থেমে নেই তাদের কার্যক্রম।

Add img sm
Add img sm

আরও পড়ুন

%d bloggers like this: