নিজস্ব প্রতিবেদক, মান্দা : নওগাঁর মান্দায় যৌতুকের দাবিতে স্বামী-শ্বশুরের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিন গৃহবধূ। তাদের উদ্ধার করে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চকশৈল্যা ডাঙ্গাপাড়া ও পরানপুর ইউনিয়নের উত্তর পরানপুর গ্রামে এসব ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনে আহতরা হলেন, চকশৈল্যা ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মতিউর রহমানের স্ত্রী শাপলা বেগম (৩০) ও উত্তর পরানপুর গ্রামের আতিকুর রহমানের স্ত্রী তানিয়া আক্তার (২৫)।অন্যদিকে উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের ভারশোঁ পশ্চিমপাড়া গ্রামে সুরাইয়া বিবি (২২) নামে এক গৃহবধূকে তিনদিন ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ নির্যাতিতা গৃহবধূকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে দেন। এ ঘটনায় নির্যাতিতার স্বামী জাহিদুল ইসলাম (২৮), শ্বশুর শাহজাহান আলী (৫০) ও শাশুড়ি গোলেশা বিবিকে (৪৫) গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
ভুক্তভোগী তানিয়া আক্তার জানান, আমি স্বামী আতিকুর রহমানের চতুর্থ স্ত্রী। যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের শিকার হয়ে আগের তিন স্ত্রীই তালাক নিয়ে চলে যান। প্রায় ৮ আগে চতুর্থ স্ত্রী হিসেবে আমাকে বিয়ে করেন আতিকুর। বিয়ের সময় জামাইকে ৪০ হাজার টাকাসহ ঘর সাজিয়ে দেয়া হয়। এর কিছুদিন পর থেকে আবারও যৌতুকের দাবিতে স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি আমার ওপর নির্যাতন শুরু করে। একই দাবিতে মঙ্গলবার সকালে স্বামীসহ পরিবারের লোকজন আমাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে জখম করে। এসময় আমার চিৎকারে প্রতিবেশিরা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে দেন।
অপর গৃহবধূ শাপলা বেগম জানান, প্রায় ১০ বছর আগে চকশৈলা গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে মতিউর রহমানের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী মতিউর রহমানসহ পরিবারের লোকজন যৌতুকের দাবিতে আমার ওপর নির্যাতন শুরু করে। আমাদের সংসারে দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। ছেলেদের মুখে দিকে তাকিয়ে সকল প্রকার নির্যাতন নিরবে সহ্য করে আসছি। মঙ্গলবার সকালে একই দাবিতে স্বামী মতিউর রহমানসহ শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে পিটিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আমি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।
মান্দা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তারেকুর রহমান সরকার বলেন, গৃহবধূ সুরাইয়া বিবির বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে ভারশোঁ গ্রাম থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ঘটনায় মামলার পর নির্যাতিতার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়িকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
অপর দুই গৃহবধূ নির্যাতনের শিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করে ওসি বলেন, এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এজাহার পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।