ডাক্তার নয়, এবিষয়ে নেই কোন প্রশিক্ষণ বা সনদ, অথচ নিজেকে সরকারি ডাক্তার দাবি করে রোগী ও এলাকাবাসীর সাথে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারনা করে আসছেন একজন ভুয়া ডাক্তার। জীবনে কোনদিন ডাক্তারী বিষয়ে পড়াশোনা বা কোন প্রশিক্ষণে অংশ না নিয়েও নিজেকে সব রোগের চিকিৎসক দাবি করেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বেলডাঙ্গা গ্রামের ইশাহাক আলিম ওরফে মো. আব্দুল আলিম। নেয় ড্রাগ লাইসেন্স, অথচ বিক্রি করছেন ফার্মেসী ভর্তি বিভিন্ন রোগের ওষুধ। ১২ বছর বয়সী মেয়ের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুঃচিন্তায় ছিলেন শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নের নাককাটিতলা গ্রামের গৃহবধূ রেহানা বেগম। প্রায় ৬ মাস আগে প্রতিবেশী এক নারীর পরামর্শে মেয়ের ওজন কমানোর চিকিৎসা নিতে রেহেনা ছুটে যান ভুয়া ডাক্তার আব্দুল আলিমের চেম্বার ও ফার্মেসী নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের খলসী বাজারে। মেয়ের ওজন কমাতে ৩ হাজার ৫’শ টাকায় এক বোতল ওষুধ নিয়ে যায় রেহেনা। দুই দিন ওষুধ খাবার পর রেহেনার কাছে ওষুধের গন্ধ নিয়ে সন্দেহ হলে বড় ছেলেকে দেখালে সে বলে, এগুলো খাবার গ্লুকোজ। এলাকার কয়েকজনকে দেখালে তারাও একই কথা বলে রেহেনাকে। পরদিন ভুয়া ডাক্তার আব্দুল আলিমকে এসে বললে সে নিজের দোষ স্বীকার করে ও টাকা ফেরত দিতে চায় এবং কাউকে না বলার অনুরোধ করে। এই ৩ হাজার ৫’শ টাকা নিতে আরো হয়রানি হতে হয় ভুক্তভোগীকে। ৬-৭ বার ঘুরিয়ে টাকা ফেরত না দিতে বিভিন্ন টালবাহানা করতে থাকে আব্দুল আলিম। জানা যায়, ডিগ্রি পাস কোর্স শেষ করে একটি ওষুধ কোম্পানিতে সেলসম্যান হিসেবে কিছুদিন কাজ করার পরই খুলে বসেন ফার্মেসী। নিজের নামের আগে লাগিয়ে দিয়েছেন ডাক্তার শব্দটি। এমনকি পরিচয় গোপন রেখে প্রতিবেদক নিজে মোটা থেকে পাতলা হওয়ার রোগী সেজে গেলে আব্দুল আলিম জানায়, ভারতীয় সীমান্ত বন্ধ থাকায় এখন সে ওষুধটা পাওয়া যাবে না। নোটবুকে প্রতিবেদকের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর লিখে রেখে তিনি বলেন, এই ওষুধ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। আমার মামাতো ভাই যেকোন উপায়ে ভারত থেকে দেশে নিয়ে এসে আমাকে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় সীমান্ত বন্ধ, তাই ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। আপনারা যান, ওষুধ পেলেই ফোন দিয়ে জানাবো। ভুয়া ডাক্তার আব্দুল আলিমের সাথে বলা এসব কথাবার্তার সবকিছুই মোবাইলে ভিডিও ধারন করে প্রতিবেদক। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আবারো উপস্থিত হলে জানা যায়, ভুয়া ডাক্তার আব্দুল আলিমের কাছে একটি বিদেশী মেশিন রয়েছে, যা দিয়ে নাকি হ্নৃদরোগসহ কয়েকধরনের রোগ নির্ণয় করা যায়। অভিযোগ রয়েছে, এই মেশিনের দোহায় দিয়ে রোগীদের থেকে হাজার হাজার টাকা আদায় করে আব্দুল আলিম। তার কাছে মেশিনের কার্যক্রম দেখতে চাইলে বিভিন্ন গড়িমসি শুরু করে ভুয়া ডাক্তার। সে জানায়, খলসী বাজারে তার আরো একটি ওষুধের গোডাউন আছে, সেখানে মেশিনের পরীক্ষা দেখাবে। এরপর চেম্বারে তালা লাগিয়ে সেই গোডাউনের সামনে গিয়ে পালিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন ফন্দি করতে শুরু করে। চাবি নিয়ে আসছি, আপনারা ২ মিনিট দাঁড়ান বলে ব্যাগ নিয়ে হাটতে থাকে। প্রতিবেদক তার পিছু নিলে আশ্রয় নেয় বাজারেই মোস্তাফিজুর রহমানের ফার্মেসীতে। প্রায় ২০ মিনিট ধরে ফার্মেসী হতে বের না হলে সেখানে তার সামনে উপস্থিত হলে তার পক্ষে উচ্চবাক্য শুরু করেন, মোস্তাফিজুর রহমান। এরপর প্রতিবেদকের সাথে মোস্তাফিজুরের কথা বলার ব্যস্ততার সুযোগে পালিয়ে যায় ভুয়া ডাক্তার আব্দুল আলিম। অভিযোগ রয়েছে, মোস্তাফিজুর রহমানই নিয়ন্ত্রণ করে এসব তার এসব অবৈধ কর্মকান্ড। এমনকি ফার্মেসীতে সরকারি ওষুধ রাখার দায়ে কয়েক মাস আগে র্যাব গ্রেফতার করে মোস্তাফিজুরকে। অভিযোগ রয়েছে, গ্রামের রোগীদের বিভিন্ন ওষুখের কথা বলে গরুর ওষুধ প্রয়োগ করার ঘটনাও আছে। মুঠোফোনে বক্তব্য নিতে ভুয়া ডাক্তার আব্দুল আলিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি এসব বিষয়ে কথা বলতে নারাজ এবং প্রতিবেদককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।এবিষয়ে কথা বলার জন্য ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানকে ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ১নং ওয়ার্ড সদস্য টুকু আলী বলেন, তার বিরুদ্ধে যেসব এসব অভিযোগ উঠেছে তা আমিও জানি। এমনকি জনগণ তার এসব কর্মকান্ডে ক্ষিপ্ত হয়ে গত বুধবার রাতে তাকে মেরেছে।মুঠোফোনে নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা সুলতানা বলেন, এবিষয়ে এখনও কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এবিষয়ে জেলা ড্রাগ সুপার মোসা. ফোয়ারা ইয়াসমিন জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাচোলে ভুয়া ডাক্তারের ফাঁদে প্রতারনার শিকার রোগীরা
