হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা এখন নিয়মিত কৃষকের ক্ষতির কারণ। প্রতিবছরই বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ বছর টানা চারবার বন্যায় আমন ধানের সঙ্গে সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই শীতের সবজি উৎপাদন নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ কৃষকদের কপালে। এই অবস্থায় ‘গ্রিনহিল সিডলিং ফার্ম’ গ্রিনহাউস পদ্ধতিতে উচ্চফলনশীল সবজির চারা উৎপাদনে নেমেছে। মাটিবিহীন পদ্ধতিতে শূন্য মৃত্যুহার ও পোকা-মাকড়ের বিরুদ্ধে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন চারা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনও শুরু করেছে তারা। সিলেট বিভাগের হাওরাঞ্চলে এই পদ্ধতিতে বারো মাস উচ্চফলনশীল সবজির চারা উৎপাদন এটিই প্রথম। ভবিষ্যতে কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবেও প্রতিষ্ঠানটিকে গড়ে তোলার চিন্তা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আধুনিক পলিহাউসে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সবজির চারা উৎপাদনের প্রথম উদ্যোগ নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন কৃষকরা।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সীমান্তের গ্রাম আমপাড়ায় এক একর জমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘গ্রিনহিল সিডলিং ফার্ম’। বর্তমানে আগাম ফলনশীল কয়েক প্রজাতির টমেটো, লাউ, ফুলকপি ও কাঁচা মরিচের চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। মাটির বদলে প্লাস্টিকের তৈরি বিশেষ ট্রেতে কোকোপিট ব্যবহার করে শতভাগ শিকড়যুক্ত চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। তাই মাটিবাহিত রোগজীবাণুতে চারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ নেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রিনহাউসের ভেতরে নানা জাতের চারাগাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা হাসান আহমদ। তাঁর পাশেই কাজ করছেন প্রকল্পটির একজন পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা গাজী নুরুল ইসলাম। চারার জন্য বেড তৈরি করছেন কয়েকজন শ্রমিক। হাসান আহমদ পরামর্শ দিচ্ছেন। এর মধ্যেই দেখা গেল সাম্প্রতিক চার দফা বন্যায় সবজিক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষক গ্রিনহাউসের ভেতর হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করছেন। তিনি টমেটো চারা অর্ডার করার জন্য এসেছেন। কর্তৃপক্ষ জানায়, তাঁকে আগামী মাসে চারা সরবরাহ করা সম্ভব হবে। কিছুক্ষণ পর এলাকার আরো দুই কৃষককেও চারার জন্য আসতে দেখা গেল।