শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে এক গ্রাম পুলিশের সরকারী চাকরীর বসয় শেষ হলেও তিনি চাকরীতে বহাল রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া ওই গ্রামপুলিশের জন্ম তারিখ ৪টি ও ৪ ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে সেসাথে তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ।
চাকরীতে বহাল ও ৪টি জন্ম সনদপ্রাপ্ত গ্রাম পুলিশ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নের ৮নং ওযার্ডের আনোয়ারুল হক।
অনুসন্ধানে জানা গেছে ৩টি জন্ম সনদের তারিখ অনুযায়ী চাকরীর মেয়াদ শেষ হলেও একটি সনদের বয়স এখনও আছে। আর সংশ্লিষ্ট ধাইনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাবারিয়ার দাপটে তিনি এখনও বহাল রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
তার জন্ম সনদে জন্ম তারিখগুলো হলো ১৫-০৬-১৯৫৮খ্রি., ০১-০১-১৯৫৮খ্রি, ০১-০৭-১৯৬০খ্রি.ও ১৫-০৬-১৯৬৮খ্রি.। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয়ের পরিদর্শকের তথ্য অনুযায়ী চৈতন্যপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে নবম শ্রেনীতে পাসকরেছেন এ গ্রাম পুলিশ।যার জন্ম তারিখ হলো ০১-০৭-১৯৬০, রেজিষ্ট্রেশন নং ২২৫১৪, শিক্ষাবর্ষ -১৭৭৩-১৯৭৪। বিদ্যালয়ের রেজিষ্টারে তার পিতার নাম মন্টু মন্ডল এবং গ্রাম দেখানো হয়েছে বামুনগাঁও।
অন্যদিকে, চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসারের স্বাক্ষরিত এন.আই ডাটাবেজ হতে পাওয়া জাতীয় পরিচয় পত্র সূত্রে জানা গেছে, তার জন্ম তারিখ ০১-০১-১৯৫৮ খ্রি, পিতার নাম শাহজাহান আলী, মাতার নাম মোসা: বানু বেগম, স্ত্রীর নাম মোসা: আকতার বেগম, শিক্ষাগত যোগ্যতা ৫ম শ্রেণী পাস, ভোটার এরিয়া কোর্ড নং ০২৯৬, ভোটার সিরিয়াল নং ২৯৯, ভোটার নং ৭০০২৯৬০৩৩৪৮৬, জাতীয় পরিচয় নং ১৯৫৮৭০১৮৮২৩০৩৪৮৬।
অপরদিকে ১৪নং ধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশদের চাকরী সংক্রান্ত তথ্যদিতে গ্রামপুলিশ আনারুলের জন্ম তারিখ দেয়া হয়েছে ১৫/০৬/১৯৫৮ এবং সেখানে পিতার নাম রয়েছে শাহাজাহান(মন্টু)। শিক্ষাগত যোগ্যতা দশম শ্রেণী পাস।
আর বিদ্যালয়ে ভর্তি রেজিস্টার অনুযায়ী চতুর্থ জন্ম তারিখটি হলো ১৫-০৬-১৯৬৮।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবার স্থানীয় গ্রামবাসী একাধিকবার অভিযোগ দেয়ার পরও কর্মরত সেই গ্রাম পুলিশ।
অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন আবু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান হাবিব, অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট আতাউর রহমান, অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিন জানান, সাম্প্রতিককালে আনারুরের অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে আবেদন করার পরও এবং তদন্ত সাপেক্ষে বয়স চুরির ঘটনা প্রমানিত হলেও একমাত্র ধাইনগর ইউপি চেয়ারম্যন তাবারিয়ার চৌধুরী ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আনারুল হক চাকুরিতে বহাল থেকে একের পর এক অনিয়ম করে চলেছে। যা সম্পূর্ন নিয়ম বর্হিভুত।
তারা আরো জানান, আমাদের শতাধিক লোকের স্বাক্ষরিত আবেদন সম্প্রতিকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিল এবং তদন্ত হলেও সে তদন্ত রির্পোট আলোর মুখ দেখেনি। একাধিকবার উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেও কোন লাভ হয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ আনারুল তার প্রভাব খাটিয়ে গ্রামের মানুষকে বিভিন্ন ভাতার ব্যবস্থা করিয়ে দেয়ার নাম করে উৎকোচ নিয়ে থাকে।যারা ভাতাভোগী তাদের কাছে উৎকোচ না পেলে হয়রানী করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে গ্রাম পুলিশ আনারুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমার জন্ম তারিখ ১৯৬৮সাল যা আমার চেতন্যপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ভর্তি রেজিস্ট্রার অনুযায়ী আমার জন্ম তারিখ হরো ১৫-৬-১৯৬৮ খ্রি আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮শ শ্রেণী পাস। জাতীয় পরিচয় পত্রে আমার জন্ম তারিখ ভূল রয়েছে। সংশোধনের জন্য আবেদন করেছি।
আর ধাইনগর ইউপি চেয়ারম্যান তাবারিয়া চৌধুরী বলেন আনারুলের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের তথ্য দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাকিব আল রাব্বী বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রাম পুলিশ আনারুলের ঘটনাটি তদন্ত হযেছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। ২ বার শোকজ করা হয়েছে। একবারের জবাব দিলেও পরেরটির কোন জবাব দেয়নি। নিয়ম অনুযায়ী তিনবার শোকজ করতে হবে। কয়েকদিনে মধ্যে আরো একটি শোকজের পর আইন অনুয়ায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।