নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এগিয়ে চলছে যানজট নিরসনে সবচেয়ে আশার প্রকল্প ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। রাজধানী শহরের উত্তর-দক্ষিণ অংশের সংযোগ ও ট্রাফিক ধারণক্ষমতা বাড়াতেই এ প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া হয়। তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে পুরো প্রকল্প। তবে একসঙ্গে পুরো কাজ শেষ হচ্ছে না। ভাগে ভাগে খুলে দেয়া হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এর প্রথম অংশ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে খুলে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সবটুকু শেষ হবে ২০২৩ সালের জুন মাসে।
চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ১৯ ভাগ। প্রথম ধাপের অগ্রগতি ৫৬ ভাগ বলে জানা গেছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী যেতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ আধাঘণ্টা। তবে টোল দিয়ে ব্যবহার করতে হবে দেশের প্রথম এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করা হয়েছিল। এরপর প্রকল্পের একাধিক অংশের নক্সা পরিবর্তন, আর্থিক সঙ্কট, জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতাসহ নানা কারণে কাজের গতি খুবই মন্থর। এ নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একাধিকবার নানা সঙ্কটের কথা তুলে ধরে তা সমাধানে কাজ চলছে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত সঙ্কটের সমাধান হলেও নির্মাণে গতি কম। সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো নির্মাণ গতি প্রকল্পের প্রথমাংশেই। অর্থাৎ বিমানবন্দর থেকে বনানী অংশে। দ্বিতীয় অংশে মাত্র ১০টি পাইল স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। আর তৃতীয় অংশে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন বিমানবন্দর থেকে ঢাকা হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী যেতে সময় লাগে কমপক্ষে তিন থেকে চার ঘণ্টা। ছুটির দিনে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। গাড়ির চাপ বেশি থাকলে সময় আরও বাড়ে। ১৯৮৩ সালে গাজীপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইনের দুপাশে সড়কপথ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হলেও এক পর্যায়ে তা বাতিল করা হয়। ফলে দীর্ঘ সময়ের প্রস্তাবিত প্রকল্পের বিকল্প কিছু নির্মাণ সম্ভব হয়নি। যার প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন যানজটের দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে তিন জেলার বাসিন্দাদের চলতে হচ্ছে।
তারা বলছেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হবে। কিন্তু আশানরূপ অগ্রগতি নেই। তবুও যানজটের ভোগান্তি এড়াতে আশাকরি সামনের দিনগুলোতে নির্মাণে গতি বাড়বে।
এখন প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগের কাজ চলছে বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা থেকে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত। তৃতীয় ভাগে কাজ হবে তেজগাঁও থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত। যানজটের ধকল থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে মেট্রোরেল, বাস র্যা পিড ট্রানজিট (বিআরটি), ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ইত্যাদি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এরই পর্যায়ে নির্মীয়মাণ প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। প্রথম অংশটি সাত দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। দ্বিতীয় অংশ পাঁচ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার ও তৃতীয় অংশ ছয় কিলোমিটারের কিছু বেশি। সব মিলিয়ে মোট দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। ওড়াল সড়কে ওঠানামার জন্য র্যা ম থাকবে ৩১টি। র্যা মসহ প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।
প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। অর্থায়ন করছে ইতাল থাই এবং চাইনিজ কোম্পানি সিনোহাইড্রো ও চায়না সেনডং। এর মধ্যে ইতাল থাইয়ের মালিকানা ৫১ শতাংশ। বাকি ৪৯ শতাংশের মধ্যে সিনোহাইড্রো ১৪ শতাংশ এবং চায়না সেনডংয়ের মালিকানা ৩৫ শতাংশ। ইতোমধ্যে তিন কোম্পানি মিলে চায়না এক্সিম ব্যাংক ও আইসিবিসি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৮৬১ মিলিয়ন ডলার। টাকার অঙ্কে ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ব্যাংক দুটি প্রথম কিস্তি ৫৫ মিলিয়র ডলার ইতোমধ্যে ছাড় করেছে। চলতি মাসের শেষ দিকে দ্বিতীয় কিস্তি ১০০ মিলিয়ন ডলার ছাড় করার কথা রয়েছে।