ফারুক অাহম্মেদ,ঢাকাঃ
দখলদারিত্বে হারাতে বসেছে গান্ধীজির গান্ধী আশ্রম।
উদ্ধার হতে পারে ৮০ বছর ধরে বেদখল হওয়া গান্ধীজির স্মৃতি চিহ্ন ॥ দখলমুক্ত করে উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হলে রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা
ঢাকার দোহারে গান্ধীজি অভয়াশ্রম ও শ্মশান ঘাটের পতিত ২২ বিঘা জমি দিন দিন জবর দখল হয়ে যাচ্ছে। আর এ দখলদারিত্বের মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যেই ৮০ শতাংশ দখল হয়ে গিয়েছে। এতে দিন দিন হারাতে বসেছে অহিংস আন্দোলনের প্রবর্তক মহাত্মা গান্ধীজির অভয়াশ্রম। দখলমুক্ত না করা হলে চিরতরে হারিয়ে যাবে গান্ধীজির রেখে যাওয়া স্মৃতি চিহ্ন। স্থানীয়রা বলছেন বেদখল হওয়া সম্পত্তিগুলো দখলমুক্ত করে উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হলে গান্ধীর রেখে যাওয়া গান্ধী আশ্রমে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফারুক আহমেদ এর তথ্য ও ছবিতে প্রতিবেদন।
ইংরেজ সা¤্রাজ্যবাদের নির্যাতনের যাঁতাকলে যখন পিষ্ঠ ভারতবাসী। তাদের জুলুম ও নিপীড়নে অতিষ্ঠ বিন্তীর্ণ জনপদের মানুষ। সে সময় ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়ে জনমনে জায়গা করে নেন ভারতবর্ষের কিংবদন্তী মহাত্মা গান্ধী। হিন্দু-মুসলমানের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ধর্মবর্নের উর্ধ্বে থেকে তিনি এ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ইংরেজদের পণ্য বর্জন করে দেশীয় পণ্য ব্যবহারে জনমত সৃষ্টি করেন। জনশ্রুতি আছে যে তিনি এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ১৯৩৭ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন বেগবান করতে তৎকালিন অভিভক্ত বাংলার তিন বারের মুখ্য মন্ত্রী ডা: প্রফুল্ল চন্দ্র মোহন ঘোষের আমন্ত্রনে মহাত্মা গান্ধী মধুরচর ও মালিকান্দা এলাকায় আসেন। এ সময় গান্ধীজি ২৪ দিন অবস্থান করেন। এ এলাকা থেকে ব্রিটিশ বিরোধী চেতনা জাগ্রত করতে কংগ্রেসের এক সম্মেলনে অংশ নেন তিনি। তার নেতৃত্বে জেগে ওঠে বহু মানুষ। তখন একটি ছনের চালার ঘর ছিল। যেটিতে তিনি রাত্রিযাপন করতেন। সে সময় তিনি এলাকাবাসীকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে তিনি এখানে খদ্দর কাপড় তৈরির তাঁত শিল্প স্থাপন, খাঁটি সরিষার তেলের জন্য ঘানি স্থাপন, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলেন। এসময় বেশিরভাগ পায়ে হেঁটে তিনি এ অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতেন। হিন্দু-মুসলমান সমাজের নানা অংশের সাথে কথা বলতেন। এসময় তিনি ২২ বিঘা জায়গা নিয়ে গান্ধীজি আশ্রম নির্মাণ করেন। একই সময়ে এ উপজেলার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মৃতদেহ সৎকারের জন্য দুই একর জায়গাজুড়ে শ্মশানঘাট নির্মাণ করেন তিনি। তার উদ্দেশ্য ছিল একটাই হিন্দু মুসলমান হানাহানি বন্ধ করে দুর্বলকে রক্ষা করা। তিনি চলে গেলেও তার স্মৃতি আজও বিদ্যমান।
কিন্তু কালক্রমে মহাত্মা গান্ধীজির নামে প্রতিষ্ঠিত অভয়াশ্রমের বিপুল পরিমান জায়গা জবর দখলের মধ্য দিয়ে হারাতে বসেছে অহিংস আন্দোলনের প্রবর্তক মহাত্মা গান্ধীর শেষ স্মৃতি চিহ্ন।
স্থানীয়রা বলছেন, যেহেতু এ গান্ধী আশ্রম উপজেলা সদরের একেবারেই সন্নিকটে, এবং রয়েছে মনোরম পরিবেশ। এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ দাতব্য চিকিৎসালয়, পরিকল্পিত স্থাপনাসহ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা হলে এটি একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে।