চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বিকাশের টাকা উঠাতে গিয়ে চেয়ারম্যানের ভাগ্নে ও দোকান মালিক সোহানের নির্যাতনের শিকার হয়েছে এক কলেজ ছাত্রী। ঘটনার ৪ দিন পর শনিবার(০৩ অক্টোবর) সকালে নির্যাতিত মেয়েটি থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ আসামী সোহান কে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
অভিযুক্ত বিকাশ এজেন্ট নাচোল উপজেলার মল্লিকপুর বাজারের বিকাশের এজেন্ট ও গোমস্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দীনের ভাগ্নে সোহান।
নাচোল থানায় দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে বান্ধবীর দেয়া ধারের টাকা বিকাশের দোকানে উঠাতে যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ও শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নের গুপ্তমানিক-মুক্তারোড়া গ্রামের মো. টিপুর দ্বিতীয় মেয়ে জান্নাতি খাতুন। পরে বিকাশের এজেন্ট মোবাইল নিয়ে দেখতে পায় ম্যাসেজ এসেছে, কিন্তু কোন ব্যালান্স নেয়। সেটি জান্নাতিকে বললে সে দোকান ত্যাগ করে চলে আসে। এরপর ঐ দোকানদার প্রায় ১ কিলোমিটার দূর থেকে সে ছাত্রীকে ধরে নিয়ে গিয়ে দোকানের সামনে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে নির্যাতন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে । মল্লিকপুর বাজারে দোকানের সামনে ৩ ঘন্টা বেঁধে রাখার সময় বাজারের লোকজন মোবাইলে ছবি ধারন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড হলে শুক্রবার(২ অক্টোবর) তা দ্রত ভাইরাল হয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজনের অনুরোধে মেয়েটিকে ছেড়ে দেন চেয়ারম্যানের ভাগ্নে ও বিকাশ এজেন্ট সোহান।
এ ব্যাপারে নির্যাতনের শিকার জান্নাতি বলেন, আমার সহপাঠী গোবরাতলা ইউনিয়নের মহিপুর গ্রামের প্রবাসী শহিদুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া খাতুন আমার নম্বরে বিকাশে আমার পাওনা ১০ হাজার টাকা পাঠায়। সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে সেই টাকা উঠাতে গেলে মহিপুর মোড়ে বিকাশের দোকান বন্ধ পায়। পাশের একজনের পরামর্শে, মল্লিকপুর বাজারে সেই দোকানে গেলে এজেন্ট আমার ফোন চাই। ফোন নিয়ে তিনি বলেন, ম্যাসেজ আছে কিন্তু ব্যালান্সে টাকা নেয়। এরপর সেখান থেকে আমার আরেক বান্ধবীর বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলে ১ কিলোমিটার দুরে খলসী বাজারে গেলে সেখান থেকে আমাকে ধরে ভ্যানে করে আবারো মল্লিকপুর বাজার থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় বিকাশ এজেন্ট সোহান।
তিনি আরো জানায়, দোকানের সামনে চোরের মতো দড়ি দিয়ে খুঁটির সাথে বেঁধে রেখে নির্যাতন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এজেন্ট সোহান ও তার লোকজন। এসময় আমার ফোন কেড়ে নিয়ে সব ম্যাসেজ ডিলেট করে দেয় এবং আমার পরিবারের সাথেও যোগাযোগ করতে বাধা দেয়। পরে স্থানীয়দের অনুরোধে তারা আমার এক চাচাতো দুলাভাইয়ের কাছে ছেড়ে দেয়।
এদিকে জান্নাতির বড় বোন মাসকুরা বেগম বলেন, সেই বাজারে সোহানের দোকানের সামনে দিয়ে জান্নাতিকে বাসায় নিয়ে আসার সময় তারা বলছে, এবার ছেড়ে দিলাম। এনিয়ে কোন বাড়াবাড়ি করলে খবর আছে। আমরা এর উপযুক্ত বিচার চাই।
এদিকে জান্নাতির দেয়া তথ্যে তার সহপাঠী গোবরাতলা ইউনিয়নের মহিপুর গ্রামের সুমাইয়া খাতুনের যে নম্বর থেকে ম্যাসেজ গিয়েছিলো সেই নম্বরে অনেকবার চেষ্টা করেও সে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে গ্রেফতারের আগে শুক্রবার রাতে অভিযুক্ত বিকাশের এজেন্ট সোহান মুঠোফোনে জানায়, বিকাশে প্রতারক সন্দেহে তাকে আটক করা হয়। পরে মেয়েটির পরিবারের সাথে সমাধান করে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সমাধানের বিষয়টি অস্বীকার করে জান্নাতির পরিবার।
এদিকে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মেয়েটি নাচোল থানায় সোহানকে প্রধান আসামী করে একটি অভিযোগ দায়ের করলে নাচোল থানা পুলিশ সেহান কে আটক করে।
এ ব্যাপারে নাচোল থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি,তদন্ত ) আ: হান্নান জানান, মামলা দায়েরের প্রেক্ষিতে সোহানকে আটকের পর আদালতে হাজির করা হলে মহামান্য আদালত সোহানকে জেল হাজতে প্রেরণ করে।